জান্নাতের মাঝের দরজা পিতা-মাতা

প্রকাশঃ জুলাই ৩, ২০১৫ সময়ঃ ৫:৪৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

ফাহিম মোনায়েম

maa ownload2একদিন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর নিকট এসে কাঁদছেন। রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হোরায়রা তুমি কেন কাঁদছ? আবু হোরায়রা বললেন,আমার মা আমাকে মেরেছেন। রাসুল (সাঃ) বললেন,কেন তুমি কি কোন বেয়াদবী করেছ?

আবু হোরায়রা বললেন, না হুজুর কোন বেয়াদবী করিনি। আপনার দরবার হতে বাড়ি যেতে আমার রাত হয়েছিল বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি আপনার কথা বললাম। আর আপনার কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারধর করল আর বলল,হয়ত আমার বাড়ি ছাড়বি আর না হয় মুহাম্মদ (সাঃ) এর দরবার ছাড়বি। আমি বললাম,ও আমার মা। তুমি বয়স্ক মানুষ। তোমার গায়ে যত শক্তি আছে তত শক্তি দিয়ে মারতে থাকো। মারতে মারতে আমাকে বাড়ি থেকে করে দাও। তবুও আমি আমার রাসুলকে ছাড়তে পারবো না।

তখন রাসূল (সাঃ) বলেছেন,তোমার মা তোমাকে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছ? আমার তো এখানে কিছুই করার নেই।

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন,হে রাসূল (সাঃ) আমি আমার মায়ের জন্য এখানে নালিশ করতে আসি নাই। রাসুল (সাঃ) বললেন,তাহলে কেন এসেছ?

আবু হোরায়রা বললেন,আমি জানি আপনি আল্লাহর নবী। আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য দোয়া করতেন,যাতে আমার মাকে যেন আল্লাহ হেদায়েত করেন।

আর তখনই সাথে সাথে রাসুল (সাঃ) হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন,হে আল্লাহ! আমি দোয়া করি আপনি আবু হোরায়রার আম্মাকে হেদায়েত করে দেন।”

রাসুল (সাঃ) দোয়া করলেন আর আবু হোরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। পিছন থেকে কয়েকজন লোক আবু হোরায়রার জামা টেনে ধরল এবং বললো,হে আবু হোরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন?

তখন আবু হোরায়রা বললেন,ওহে সাহাবীগণ তোমরা আমার জামা ছেড়ে দাও। আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দৌড়াইতেছি এই কারণে যে,আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার নবীজির দোয়া আগে পৌঁছে গেছে। হযরত আবু হোরায়রা দরজায় ধাক্কাতে লাগলো।

ভিতর থেকে তার মা যখন দরজা খুললো তখন আবু হোরায়রা দেখলেন তার মা’র সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। তখন মা আমাকে বললেন,হে আবু হোরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি,অনুশোচনা করেছি। মনে মনে ভাবলাম আমার ছেলে তো কোন খারাপ জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? আমি বরং লজ্জায় পড়েছি তোমাকে মেরে। হে আবু হোরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে চল।

আর তখনই সাথে সাথে আবু হোরায়রা তার মাকে রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মাকে সেখানেই কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। পিতা মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও,দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো,নতুবা তা রক্ষা করতে পারো। সুবাহান আল্লাহ
[তিরমিজি ]

রাসূলে খোদা (সা) বলেছেনঃ বেহেশ্‌ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৫৪৩৯, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )

ইমাম সাদেক (আ) বলেছেনঃ এক লোক রাসূলের খেদমাতে এসে আরজ করলো-হে রাসুল! খেদমত করবো কার? রাসূল বললেনঃ তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর কার? রাসূল বললেনঃ তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর? রাসূল বললেন-তোমার মায়ের। লোকটি আবারো জিজ্ঞেস করলো তারপর কার? নবীজী বললেন-তোমার বাবার। ( আল-কাফিঃ ৯/১৫৯/২,মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )

রাসূলে কারিম (সা) বলেছেনঃ নারীর প্রতি সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার স্বামীর,আর পুরুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৪৭৭১, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ২৫৪ )

প্রতিক্ষণ/এডি/ফাহিম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G